গ্রাহকের জমানো প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটন।
উপজেলার আলগী বাজারের সততা এন্টারপ্রাইজ নামের এজেন্ট ব্যাংকের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান শাখা পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটন। তিনি রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীরা জানান, সর্বত্রই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সুনাম রয়েছে। বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাঁদেরকে শাখা থেকে জমা রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন এক হাজারের বেশি গ্রাহকের টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে কৌশলে নিজের অ্যাকাউন্টে নেন। এভাবে অন্তত ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তিনি পালিয়ে যান বলে দাবি গ্রাহকদের।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শাখা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। অনেকেই অনলাইনে নিজেদের হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকেরা।
এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আটক করে টাকা আদায়সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতারক উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরি ও আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার বেগমাবাদ হুগলাকান্দি গ্রামের লিপি বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘ব্যাংকে ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। হঠাৎ শুনি ব্যাংকের লোকেরা টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। এসে ব্যাংক তালাবদ্ধ দেখছি। বিদেশ থেকে স্বামীর কষ্ট করে পাঠানো টাকা জমা রাখতাম। ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ মনে করে সব জমা করেছিলাম। আমি এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না। টাকা ফেরত চাই।’
মাঝেরচর এলাকার হিরন মিয়া নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘৭ লাখ টাকা ডিপোজিট করেছিলাম। চলতি হিসাবে ৫০ হাজারের মতো ছিল। এমন প্রতারণা মেনে নেওয়া যায় না। আমারসহ গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা চাই।’
এ বিষয়ে নরসিংদীর ভেলানগর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মাকসুদ হাসান বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম প্রধান অফিস নিয়ন্ত্রণ করে। ইতিমধ্যে প্রধান অফিস ঘটনাটি অবগত। আইনগত পদক্ষেপ চলমান আছে বলে জেনেছি।’
রায়পুরা থানার পরিদর্শক তদন্ত মীর মাহবুব বলেন, খবর পেয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রতারক চক্রটি বেশ বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও রোজলিন শহিদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। ভুক্তভোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। অভিযোগ পেলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।’